ইন্টারনেট বর্তমান সময়ের দৈনন্দিন জীবনের এক অপরিহার্য নাম । অফিসের কাজ থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত যোগাযোগ তো বটেই, ইন্টারনেটে আর্থিক লেনদেনের কাজও হচ্ছে বর্তমানে । কিন্তু ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার মতো মানুষেরও অভাব নেই যুগান্তকারী এই উদ্ভাবনকে । বর্তমানে ইন্টারনেটের নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের ম্যালওয়্যার, স্পাইওয়্যার, ভাইরাস । এসব ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি অনলাইনে তথ্য চুরি থেকে শুরু হ্যাকিং করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কাজও করছে । প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোও ছাড় পাচ্ছে না হ্যাকিং এর এই দৌরাত্ম্য থেকে। অনেক সময়ই শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে অনলাইনে হ্যাকিং এর বিভিন্ন গতিবিধি ।
আসুন জেনেনি কিছু সাবধানতা
সাবধান ইমেইলের অফারে
অনেক সময়ই দারুণ কিছু অফার এসে হাজির হয় ইমেইলের ইনবক্সে । যেমন আপনি বিশাল অংকের এক লটারি জিতেছেন অথবা আপনার মাধ্যমে আপনার স্থানীয় কোনো প্রকল্পের অফার দেওয়া হয় বিনিয়োগকারীর পক্ষ থেকে । নিশ্চিন্তে এসব ইমেইলকে স্প্যাম হিসেবে চিহ্নিত করে দিতে পারেন, যদি আপনার একেবারে খুব কাছের কোনো মানুষের কাছ থেকে এসব ইমেইল না এসে থাকে। এসব ইমেইলে মূলত ভালো ভালো অফারের কথা বলে আপনার আর্থিক এবং ব্যক্তিগত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করা হয়ে থাকে হ্যাকিং এর মাধ্যমে। নিতান্তই বোকামি হবে যদি ক্রেডিট কার্ড বা আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সম্পর্কিত কোনো তথ্য এসব ইমেইলের জবাবে পাঠিয়ে থাকেন ।
সতর্ক হোন ই-মেইল অ্যাটাচমেন্টে
অনেক সময় অপরিচিত ঠিকানা থেকে ইমেইলে অফিসের কাজের উপযোগী কোনো ডক্যুমেন্ট কিংবা প্রয়োজনীয় কোনো সফটওয়্যার অ্যাটাচমেন্ট হিসেবে হাজির হতে পারে । মূলত বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করা হয় ইমেইল ব্যবহারকারীর মাঝে এসব প্রয়োজনীয় বিনামূল্যের রিসোর্সের কথা বলে । মুলত এসব অ্যাটাচমেন্টের সাথে থাকে ম্যালওয়্যার বা ভাইরাস যেগুলো আপনার পিসিকে অচল করে দেওয়ার জন্য কিংবা পিসির তথ্য হাতিয়ে নেওয়া জন্য । তাই ভালো করে দেখে নিন অপরিচিত কারও কাছ থেকে অ্যাটাচমেন্টসহ ইমেইল আসলে । এসব অ্যাটাচমেন্ট ডাউনলোড করুন ইমেইল প্রেরণকারীর পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তবেই ।
নির্ভরযোগ্য নয় সকল ওয়েবসাইট
আমাদের প্রচুর পরিমাণে ওয়েবসাইট ভিজিট করতে হয় বিভিন্ন কাজের জন্য। এসব ওয়েবসাইটের অনেকগুলোতেই লগ-ইন বা রেজিস্ট্রেশন করতে হয় । এর সবগুলো কিন্তু আবার নির্ভরযোগ্য নয় । নেহায়েত কম নেই ফেক ওয়েবসাইটের সংখ্যা, যাদের আসল কাজ হলো লগ-ইন বা রেজিস্ট্রেশনর নাম করে আপনার তথ্য হাতিয়ে নেওয়া । অনেক সময় ফেক কপিও করা হয়ে থাকে ব্যাংকের ওয়েবসাইটগুলোর । হ্যাকিং এর মাধ্যমে হুবহু কপি করা হয় এসব ওয়েবসাইটের ডিজাইন সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ওয়েবসাইটের । এমনভাবে বাছাই করা হয় যাতে হয়তো একটা অক্ষরে একটু ভিন্নতা থাকে ওয়েব ঠিকানাতে এবং এই পরিবর্তন চোখ এড়িয়ে যায় সাধারণভাবে । তাই ভালো করে যাচাই করে নিন ওয়েব ঠিকানা । আর দেখে নিন ওয়েব ঠিকানায় ‘এইচটিটিপিএস: (https:)’রয়েছে কি না।‘এইচটিটিপিএস: (https:)’ সার্টিফিকেট থাকে বেশিরভাগ বিশ্বস্ত ওয়েবসাইটের সুরক্ষার জন্য । তাই সেই ওয়েবসাইটকে সন্দেহজনক তালিকায় ফেলে দিন ‘এইচটিটিপিএস: (https:)’না থাকলে ।
ভরসা রাখুন বিশ্বস্ত মোবাইল অ্যাপসে
বর্তমানে সব কাজ করার ধারা তৈরি হচ্ছে স্মার্টফোন আর ট্যাবলেট পিসির এই যুগে মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমেই । হ্যাকাররাও এই সুযোগ নিতেও প্রস্তুত । তারা সফলও বটে মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে স্পাইওয়্যার, ভাইরাস আর ম্যালওয়্যার ছড়ানোর কাজে । এক্ষেত্রে ইন্সটল করবেন না বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য অ্যাপস না হলে । মনে রাখবেন গুগল প্লে-স্টোরের বেশিরভাগ অ্যাপসই ভেরিফায়েড। এর বাইরে অ্যাপসের নির্মাতার নাম-ঠিকানা জেনে নিন এবং জানার চেষ্টা করুন তারা কতটা বিশ্বস্ত থার্ড-পার্টি অ্যাপস ব্যবহারের ক্ষেত্রে । পড়ে নিতে পারেন অ্যাপসের রিভিউও । আর অফিশিয়াল ওয়েব সাইট বা অফিশিয়াল ওয়েব স্টোরেই নির্ভর করুন অ্যাপস ইন্সটল করার ক্ষেত্রে ।
চাকচিক্য বিজ্ঞাপন
অনেক সময়ই চমকিত করার মতো সব অফার পাওয়া যায় অনলাইনে সেবার বিজ্ঞাপনে ও বিভিন্ন পণ্যে । অনেক সময় এর প্রকৃত দামের ৮০ বা ৯০ ভাগ কম কোনো পণ্যের দাম উল্লেখ করা হয় । ফ্রি উপহারের অফারও থাকে অবিশ্বাস্য রকমের । সতর্ক থাকুন এসব অফার থেকে । এগুলোর বেশিরভাগই ফিশিং বা স্ক্যাম কার্যক্রমের অংশ। আপনার আর্থিক তথ্য হাতিয়ে নেওয়া হলো এসবের মূল লক্ষ্য । তাছাড়া চোরাই পণ্য কেনাবেচার জন্যও এমন কৌশল অবলম্বন করা হয়ে থাকে অনেক সময় । সেক্ষেত্রে ফেঁসে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকবে আপনার চোরাই পণ্য কিনলে ।